পাঠকের পছন্দ

Tuesday, September 22, 2015

কথা কলকাতা - এক

কথা কলকাতা - ১

১৬৯৮  খৃষ্টাব্দের ১০ই নভেম্বর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বেহালার সাবর্ণ চৌধুরীদের কাছ থেকে তিনটি গ্রাম সুতানুটি,কলকাতা গোবিন্দপুর কিনে নিয়েছিল ১৩০০টাকার বিনিময়ে । ‘শহর কলকাতা’র পথচলা অতয়েব শুরু হয়েছিল সেদিন থেকে । কিন্তু প্রকৃত অর্থে কলকাতার নগরায়ন শুরু হয় পলাশির যুদ্ধের পরে (১৭৫৬) । নতুন একটা শহরের পত্তন তো হ’ল, কিন্তু কেমন ছিল সেই আদি কলকাতার চেহারাটা ? কলকাতা পত্তনের ১৬ বছর পরে অর্থাৎ ১৭০৬ খৃষ্টাব্দে যে তিনটি গ্রাম নিয়ে কলকাতা হ’ল, সেই তিনটি গ্রামের জমি,বাড়ি রাস্তা ইত্যাদির একটা জরীপ হয়েছিল । সেই জরিপ অনুযায়ী  সাবেক কলকাতার অবস্থা ছিল এই রকম –
সুতানুটি - মোট জমি ১৬৯২ বিঘা । তারমধ্যে ১৫৫৮বিঘা ছিল জঙ্গল ও ধানক্ষেত । গোবিন্দপুর – মোট জমি ১১৭৮ বিঘা । তারমধ্যে ১১২১ বিঘা ছিল ঘোর জঙ্গল । কলকাতা -  দুভাগে ভাগ করা হয়েছিল (১) বাজার কলকাতা – মোট জমি ৪৮৮ বিঘা, তারমধ্যে পতিত জমি চিল ৮৮ বিঘা । (২) ডিহি কলকাতার মোট ১৭৭৮ বিঘা জমির মধ্যে ১৪৭০ বিঘা ক্ষেত ও পতিত জমি । তো, তিনটি গ্রাম যা নিয়ে কলকাতা, তার মোট ৫০৭৬ বিঘা জমির মধ্যে ১৫২৫ বিঘা চিল ধানক্ষেত, ৪৮৬ বিঘায় ছিল বাগান । ঐ সনের জরিপ অনুযায়ী তখন মাত্র দুটি ‘স্ট্রীট’ ও দুটি ‘লেন’ ছিল ।
আরো ২০ বছর পরে দ্বিতীয় জরিপ হয়, তখন ‘স্ট্রীট’এর সংখ্যা হয় ৪, ‘লেন’ ৮ । আরো ১৬ বছর পরের, ১৭৪২এ তৃতীয় জরিপে দেখা যায় কলকাতার স্ট্রীটের সংখ্যা- ২৭, ‘লেন’- ৫২, বাইলেন-৭৪ । ১৭৫৬ পর্যন্ত কলকাতায় একটিও বড় রাস্তা বা’রোড’ ছিল না । ১৭৯৯এ কলকাতায় প্রথম চওড়া বড় রাস্তা হয় ‘সার্কুলার রোড’ – ইট ভাঙ্গা খোয়া দিয়ে । তখন থেকে কলকাতায় ঘোড়ার গাড়ি চলা শুরু হয় । তার আগে পর্যন্ত কলকাতায় স্থল যান বলতে ছিল মানুষ টানা পালকি ।
ঘোড়ার গাড়ির চল হওয়া শুরুহলেও তা ছিল সাহেবদের ব্যবহার্য । এদেশীয় মানুষ পালকিই ব্যবহার করতেন । ইউরোপীয়রাও পালকিতে যাতায়াত করত । জানা যায় ডেভিড হেয়ার কোনদিন ঘোড়ার গাড়ি চড়েন নি, বরাবর পালকি ব্যবহার করতেন । অভিজাত জমিদারদের নিজস্ব পালকি থাকতো, পালকি ভাড়াও পাওয়া যেত । পালকি বেহারা মাইনা পেত ৫টাকা মাসে । ভাড়া করা পালকির খরচ ছিল পালকি ও পাঁচ জন বেহারার মজুরি মিলিয়ে দিনে একটাকা চারআনা ।
কলকাতার নগরায়ন শুরু হয়েছিল পলাশীর যুদ্ধের পর । কোম্পানীর শাসনের কাজ চালানোর জন্য যেটুকু তাদের দরকার চিল । মুর্শিদাবাদের নবাবের কোষাগার লুঠকরা অর্থে কোম্পানীর ছোট বড় সাহেবরা আর তাদের পদসেবা করা দেশী বেনিয়া, মুৎসুদ্দিরা যেন এক একজন নবাব হয়ে গেলেন, বিলাসীতায় গা ভাসালেন । কলকাতা বাড়তে আরম্ভ করলো উনিশ শতকের গোড়া থেকে ।

তথ্য সূত্র – কলিকাতা দর্পণ / রাধারমণ মিত্র




2 comments:

  1. অতি প্রয়োজনীয় কাজ। রাধারমণ মিত্র, বিনয় ঘোষ হতে এযাবৎ কলকাতা তথা বঙ্গভূমির ইতিহাস নিয়ে যত কাজ হয়েছে সবই প্রায় মাটিচাপা পড়ে গেছে। অন্য নিষাদ তার পুনরুদ্ধার করলে বঙ্গবাসী চিরঋণী থাকবে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. যথার্থ বলেছেন । অজস্র তথ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এখন পাওয়া যায়না এমন বই ও প্রাচীন পত্র-পত্রিকায় । আমি সেখান থেকে কিছু উদ্ধার করছি । ধন্যবাদ জানাই আপনাকে ।

      Delete